বরগুনার বেতাগী উপজেলার বিবিচিনিতে এই মসজিদটি অবস্থিত। বরগুনার বেতাগী উপজেলা সদর থেকে আঞ্চলিক মহাসড়ক ধরে উত্তর দিকে ১০ কিলোমিটার পথ অগ্রসর হলেই বিবিচিনি গ্রাম। দিগন্তজোড়া সবুজের বর্ণিল আতিথেয়তায় উদ্ভাসিত ভিন্ন এক ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যে উঁচু টিলার উপর মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে মোঘল স্থাপত্যকর্মের এই ঐতিহাসিক মসজিদ।
সম্রাট শাহজাহানের সময় সুদূর পারস্য থেকে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে শাহ নেয়ামতউলল্লাহ দিল্লিতে আসেন। এ সময় দিল্লির সম্রাট শাহজাহানের দ্বিতীয় পুত্র বঙ্গদেশের সুবাদার শাহ সুজা তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন এবং কতিপয় শিষ্যসহ বজরায় চড়ে তিনি ইসলাম প্রচার ও ইবাদতের জন্য ভাটির মুল্লুকে প্রবেশ করেন। শাহ নেয়ামতউল্লাহ বজরায় চড়ে দিল্লি থেকে রওনা হয়ে গঙ্গা নদী অতিক্রম করে বিষখালী নদীতে এসে পৌঁছলে বিবিচিনিতে শাহজাদা বাংলার সুবেদার মোহাম্মদ শাহ সুজার অনুরোধে একই গ্রামে এক গম্বুজবিশিষ্ট এই মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন। বিবিচিনি গ্রামের পার্শ্ববর্তী গ্রাম নেয়ামতি। নেয়ামতিও নেয়ামত শাহের নামানুসারে নামকরণ করা হয় বলে জানা যায়।
বিবিচিনি শাহী মসজিদ আমাদের দেশের অন্যতম ঐতিহাসিক স্থান। ১৬৫৯ সালে হযরত শাহ নিয়ামত উল্লাহ পারস্য থেকে এই অঞ্চলে আসেন ইসলাম প্রচার করতে। এই মসজিদটি এবং এখানকার গ্রামটি তারই কন্যা “হায়াচ বিবি চিনির” নামে নামকরণ করা হয়েছে। স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায় এই তিনটি কবর হল হযরত শাহ নিয়ামত উল্লাহ ও তার দুই কন্যা চিনিবিবি এবং ইশা বিবির। ১৭০০ সালে হযরত শাহ নিয়ামত উল্লাহ এর মৃত্যুর পর তাকে মসজিদের পাশে সমাহিত করা হয়। ‘বিবি চিনি’ মসজিদও মুঘল আমলে প্রতিষ্ঠিত।
প্রাচীন এই মসজিদের দেয়ালে তিনটি প্রবেশ পথ রয়েছে। এবং মসজিদটি খিলানের সাহায্যে বানানো হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। মসজিদটি ৩৩ ফুট লম্বা, ৩৩ ফুট চওড়া এবং মসজিদটির দেয়াল প্রায় ৬ ফুট প্রশস্ত। এছাড়া মসজিদের পাশে ৪০ ফুট থেকে ৪৫ ফুট লম্বা তিনটি কবর রয়েছে যেগুলো আজ বিলীন হবার পথে। মসজিদে ব্যবহৃত মোঘল আমলের ইট দেখে ধারণা করা হয় মসজিদটি মোঘল আমলে নির্মিত হয়েছিল। মসজিদের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ থেকে সংস্কার করা হয় (১৯৯৩)।
১৯৮৫ সালে বেতাগী উপজেলার প্রশাসন মসজিদটি প্রথম সংস্কার করা করে।১৯৯২ সালে, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ মসজিদটির রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের দায়িত্ব গ্রহণ করে এবং এটিকে প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান হিসাবে তালিকাভুক্ত করে।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস